আজ ০৯আগষ্ট ২০২৪ শুক্রবার , যশোর দড়াটানা ভৈরব চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ,যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে “ছাত্র জনতার অভুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কার ও নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের ” দাবিতে গণ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। গণসমাবেশ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মিয়া মোহাম্মদ আব্দুল হালিম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন।কোটা আন্দোলনে আইনবহির্ভূত কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে বিপুলসংখ্যক ছাত্র ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ও গুরুতর আহত করা দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার পরিপন্থী ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অরাজনৈতিক এ আন্দোলনকালে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীসহ অনেক শান্তিপ্রিয় নাগরিক নিহত, হাজার হাজার মানুষ আহত ও গণগ্রেপ্তার, গণনির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। হত্যা, নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক জড়িতদের শান্তির দাবি করি।
এ আন্দোলন চলাকালে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে মনে রাখতে হবে, মানুষের প্রাণের মূল্য দুনিয়ার সব সম্পদ বা স্থাপনার চেয়েও অনেক বেশি। স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এসব প্রাণহানি ও নাশকতার জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
প্রধান অতিথি মাওলানা শোয়াইব হোসেন বলেন, “সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, অহিংস, যৌক্তিক ও অরাজনৈতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সহিংসতায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশে নজিরবিহীন ও নির্মম হত্যাকাণ্ড, ধারাবাহিক বেআইনি নির্যাতন ও নিপীড়ন, বিচারহীন মামলা, যথেচ্ছ হামলা, গণগ্রেপ্তার, অবৈধ রিমান্ড, নিরাপত্তা দেওয়ার ভুয়া যুক্তিতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটক ও নির্যাতন, হুলিয়া-পরোয়ানা, অনলাইন-অফলাইন হুমকিসহ সংবিধান, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এক নৈরাজ্যপূর্ণ ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল তা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জেলা সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন,স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। এখন সময় দেশ গড়ার। এখন সময় সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণের।” এই যুগ সন্ধিক্ষনে আগামী পরিকল্পনা হিসেবে আমরা কিছুু প্রস্তাব তুলে ধরতে চাই।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।গ্রহনযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আহত/নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ বছরে সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে।আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।
প্রধান অতিথি মাওলানা শোয়াইব হোসেন বলেন,”
মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল আলম খোকা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.আবু নসর,সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল হালিম, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সরদার,সংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ আব্দুর রশিদ, প্রচার-দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান, ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক গাজী সহিদুল ইসলাম, সদর থানা সভাপতি মোঃ আখতারুজ্জামান, জেলা শ্রমিক আন্দোলনের সহসভাপতি মুফতি সাকের,ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ,যশোর জেলা সভাপতি মোঃ ইমরান হোসাইন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।