আব্দুল্লাহ শাফি: chatra-rajoniti
এক সময় ভালো ছাত্ররা রাজনীতি করলেও বর্তমানে তারা শুধু রাজনীতি বিমুখ হই নয়, বরং সন্ত্রাস নির্ভর ছাত্র রাজনীতিকে মন থেকে ঘৃণা করে। কিন্তু তারা ছাত্র রাজনীতির কাছে বন্দী হয়ে আছে। কতিপয় পেশাদার সন্ত্রাসের কাছে ছাত্রদের শিক্ষাজীবন যেন ইজারা করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হতে পারে না। নকলের দাবিতে শিক্ষক প্রহারের ঘটনাও ঘটে। পড়াশোনা না করলেও মার্ক কিংবা জোর করে ভালো রেজাল্ট আদায় করার নজির দেখা যায়। পিছনের বেঞ্চের ছাত্ররাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতা বা হর্তা কর্তা,মাতব্বর। বর্তমানে ভিসির কথায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে না, বরং ছাত্র রাজনীতির সাথে সংযুক্ত নেতৃবৃন্দের কথায়ই বিশ্ববিদ্যালয় চলে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক – কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেও ছাত্রদের ভূমিকা থাকে। বই আর খাতার পরিবর্তে মরোনাস্ত্রই কিছু সংখ্যক ছাত্রের হাতে দেখা যায়। আর তাদের হাতেই তাদের সহপাঠী খুন হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বিশেষতআবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভুলিনি কেউ।ছাত্রনেত্রীবৃন্দের অনেকেই ছাত্র জীবনে বাড়ি গাড়ির মালিক হচ্ছে। তারা টেন্ডার, ভাঙচুর ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত হতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। পত্রিকা রিপোর্টে এটাও প্রমাণিত যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করেছে। এর চাইতে দুঃখজনক ব্যাপার আর কি হতে পারে! রাজনৈতিক নেতারা ছাত্রদের নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছেন। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র রাজনীতির ধারাকে বলা যেতে পারে লেজুড়বৃত্তিক ও সন্ত্রাস নির্ভর।ছাত্র নেতৃত্ব পড়াশোনার চেয়ে ছাত্র সংগঠন নিয়েই বেশি ব্যস্ত। ফলে দেশ পরিচালনার যোগ্য লোক তৈরি হচ্ছে না।
অন্যদিকে,
বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র রাজনীতির বর্তমান ধারাকে ঘৃণা করে। তাই প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে ছাত্রদের ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহারের পরিবর্তে তাদের মেধা ও যোগ্যতার বিকাশ সাধন করে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউরোপ -আমেরিকায় ছাত্ররা পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। উন্নত বিশ্বের কোথাও রাজনৈতিক কারণে ছাত্র সংঘর্ষ নেই। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় লিফলেট -পোস্টার আর মিছিলের পর মিছিল নেই। ভাঙচুর, লুটপাট, চাঁদাবাজি আর ক্ষমতার অপব্যবহার নেই। অতএব, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির বর্তমান ধারা পরিবর্তন করা সময়ের অনিবার্য দাবি। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিবর্তে ছাত্র সংগঠন গুলোর কর্মসূচি হওয়া উচিত পড়াশোনায় উন্নয়ন, পড়াশোনায় পরস্পর সহযোগিতা এবং মানবসেবা। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে কোন দলকে ক্ষমতায় বসানো আর কোন দলকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব নয়। সচেতন নাগরিক হিসেবে পছন্দের রাজনৈতিক দল থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু দলীয় স্বার্থে সন্ত্রাসের জড়িত হওয়ার চেয়ে দেশের বৃহত্তর প্রয়োজনে সৎ, দক্ষ এবং যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। অতএব, ছাত্র-ছাত্রীদের চারিত্রিক নিষ্কলুষতা এবং পড়াশোনা মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে অবশ্যই ছাত্র রাজনীতির বর্তমান ধারার পরিবর্তন চাই।