মীলাদুন্নবী নয় সীরাতুন্নবীই পালনীয়ঃ
আমাদের সকলের মাঝে সুপরিচিত দুটি শব্দ: জন্ম এবং জীবন। জন্ম হলো, একটি প্রাণ সুনির্দিষ্ট সময় মায়ের গর্ভে অবস্থানের পর দুনিয়াতে তার আগমন ঘটা। ব্যাস এটাই হলো জন্ম। আর জীবন বলা হয়, ইহলোক থেকে পরলোক গমন পর্যন্ত পুরা সময়কে। একটি মানুষ এই ধরাধামে যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনের সমষ্টিকেই জীবন বলে। জন্ম-মৃত্যু, কৃতকর্ম, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আরাম- আয়েশ সবই জীবনের একেকটি অবিচ্ছেদ্য পাঠ। সব মিলিয়েই জীবন। তাই এটি হলো ব্যাপক। আর জন্ম হলো খাস। জীবনের মাঝে জন্ম আছে তবে জন্মের মাঝে জীবন নেই।
এই জন্মকেই আরবীতে মীলাদ এবং জীবন কে সীরাত বলে। আর মীলাদুন্নবী অর্থ হলো:- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম এবং সীরাতুন্নবী অর্থ হলো :- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোটা ৬৩ বছরের জীবন চরিত। সুতরাং চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে হলে মীলাদুন্নবী নয় বরং সীরাতুন্নবী কে আঁকড়ে ধরে জীবনের প্রতিটি ক্ষণে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। কেননা মীলাদুন্নবী পালন করা সম্ভব নয়, বরং তাআলোচনার বিষয়। পালন করতে গেলে প্রতিটি মা’ কে সন্তান ভূমিষ্ঠের সময় হযরত আমেনার মত অনুভূতি অনুভব করতে হবে। যা সম্ভব নয়। স্বাভাবিকতার বাহিরে অসংখ্য অলৌকিকতা প্রকাশ পেতে হবে। সেটিও দুষ্প্রাপ্য। ভূমিষ্ঠ শিশুর কারণে হযরত হালিমাতুস সা’দিয়া এর বাহনজন্তু, পরিবার এমনকি মেষ দুম্বার পালের মধ্যের কাঙ্ক্ষিত বরকত অন্যত্র পরিস্ফুটিত হতে হবে, যা আদেও সম্ভব নয়। এজন্যই বলা হয় মীলাদুন্নবী পালন করা অসম্ভব।
তবে সীরাতুন্নবী হলো একজন মুমিনের মুল্যবান পাথেয়। যা তাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাহনুমায়ি করবে সফলতার দিকে। পৌঁছে দিবে মানযিলে মাকসুদে। তাই প্রকৃত সাচ্চা আশেকে রাসুল কখনো নবীজীর জন্ম কেন্দ্রীক কোন মানব রচিত তন্ত্র- মন্ত্র বা বেদয়াত কর্ম পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে না। বরং এ উদযাপনও হবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ করে। সে লক্ষ্যে আমরা যদি মুসলিম শরীফের ১১৬২ নং হাদিসের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে নবীজীর জন্ম উপলক্ষে আমাদের করনীয় বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হয়ে যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্ম উপলক্ষে কোনো বাৎসরিক আমলকরতেন না বরং তিনি সাপ্তাহিক আমল তথা প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। কারণ তিনি এ দিনেই জন্ম গ্রহণ করেছেন। এটিও আমরা জানতে পেরেছি নবীজীর সীরাত বা কর্মপদ্ধতি থেকে।
নবীজীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমরা যদি রূসম রেওয়াজের পিছনে না পড়ে ব্যক্তিগত ভাবে দুরূদের আমল করি অথবা কুরআন খতম করি কিংবা তার জীবনী সম্বলিত কোন গ্রন্থ পাঠ করি। সেটিও করা যেতে পারে।
আসলে মুল ব্যাপার হলো:- খাঁটি আশেকে রাসুল এর
জন্য নবীজীকে ভালোবাসতে কোন দিবস লাগে না বরং প্রতিটি মুহূর্তে সে তার আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পাই।
এজন্য নবীজীর জন্ম কে কেন্দ্র করে বেদআতি রূসম রেওয়াজ পরিহার করে সীরাতুন্নবীর আলোকে অগ্রগামী হতে হবে। শুধুমাত্র প্রবৃত্তির অনুসরণ করে মীলাদুন্নবী উদযাপন করলে হবে না। কেননা রাসুলের জন্মে তো আবু তালেব, আবু লাহাব খুশি প্রকাশ করেছিল কিন্তু তারা সীরাত অনুসরণ করেনি, ফলে তাদের ঠিকানা হয়েছে জাহান্নামে। পক্ষান্তরে সীরাত ফলো করেছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ, হযরত ওমর রাঃ তাদেরঠিকানা হয়েছে জান্নাতে। শুধু তাই নয় দুনিয়া থেকেই তারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। তাই আসুন আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্ব নবীর অনুপম আদর্শ মোতাবেক আমাদের জীবন কে রাঙানোর চেষ্টা করি। তবেই আমরা সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সক্ষম হবো।
মাসুম বিন জিহাদ
সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া নূরিয়া আব্বাসিয়া,খড়কি,যশোর।